চ্যাঙ নয় ব্যাঙ নয় --- প্রীতিপ্রভা রায়

অনিমা রায়,ছয় বছর।মামা'র বাড়ীতে থেকে পাশের কিণ্ডার গার্ডেন স্কুলে পড়ে। বাড়ীতে এসে
স্কুলের ব্যাগটা রেখেই বাড়ির পিছনে ছুটল সে, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কাদাজলের মধ্যে,যেখানে পাশের বাড়ির ছোট-বড় সবাই ব্যস্ত হয়ে মাছ ধরছে।অভিমানের সুরে চেঁচিয়ে উঠলো অনি,
:-আমাকে ছেড়ে মাছ ধরতে নেমেছ সবাই!
ছোটমামী উত্তর দিল,
:-রাগ করিস না মা,তুই তো স্কুলে ছিলি!মাছ ধরার কোন প্লান ছিল না।হঠাৎ করে রুনু বলল,কাকীমা মাছ ধরবো এসো। সবাই নেমে পড়েছে দেখে আমিও এলাম।
তাতেও মান ভাঙলো না অনিমার,প্রত্যত্তুরে বলল,
:-তোমরা তো এতক্ষনে অনেক মাছ ধরেছ বোধহয়!শেষে এসে আমি আর কয়টা ধরতে পারবো বলতো?আমিতো মাছধরা শিখিইনি এখনো,আমাকে শিখিয়ে দেবে মামী?
:-আচ্ছা আয়,দ্যাখ,এভাবে কাদার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে হাতরাতে হয়,আর ওই যে দ্যাখ,মাথা ভাসিয়ে রেখেছে একটা বাচ্চামাছ!আমি ধরছি তুই দ্যাখ,কীভাবে ধরি। মাছটা ধরে অনিকে দেখাল মামী,আর বলল,
:-খুব শক্ত করে ধরবি কিন্তু,চ্যাঙ মাছগুলো খুব পিচ্ছিল প্রকৃতির হয়।
:-আচ্ছা মামী,তাই হবে।
মহানন্দে মাছ ধরতে শুরু করলো অনিমা। একবার ঝুমুর কাছে,একবার রুনুর কাছে গিয়ে ধরতে লাগল মাছ। তার লাফালাফি দেখে সবাই বলতে লাগল,
:-এত লাফালাফি করিস না!মাছ পালিয়ে যাবে তো!
:--কে বলেছে!আমি তো মাছ খুঁজছি,খুঁজতেও দিবি না,নাকি?
কেউ কিছু বলল না। জানে,বললেও এ পিচ্চি মানবে না, উল্টো জবাব দিয়ে দেবে। চার পাঁচটা মাছ ধরার পরে মামীকে বলল অনিমা,
:-মামী,মাছগুলো কোথায় রাখি?
মামী বলল,কিচ্ছু আনিসনি মাছ রাখার ভাণ্ড!
:-না তো!
:-ঠিক আছে,আমার খলুইটাতেই রাখ,পরে নিয়ে নিস।
:-না মামী,আমি যদি বেশি বেশি মাছ ধরে ফেলি,তখন কী করে বুঝবে কোনগুলো তোমার?কোনগুলো আমার?
মামী বলল,
:-কয়টা আর ধরবি?বড়জোড় দশটা-বিশটা! এখানেই রাখ না মা।
 অনি নাছোড়বান্দা,সে কিছুতেই মামীর খলুইতে নিজের ধরা মাছ রাখবে না! এমতাবস্থায় মামী আর কি করবে!বাধ্য হয়ে নিজের ধরা মাছগুলো ঝুমুর খলুইতে রেখে নিজের খলুইটাই দিয়ে দিল অনিমাকে। খলুই পেয়ে খুব খুশি হল অনিমা,বলল,
:-আমার সোনা মামী তুমি।
মামীমা বলল,
:-আর বলতে হবে না,মাছ ধরে দ্যাখা দেখি কতগুলো ধরতে পারিস?
আবার সবাই মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।প্রায় ঘণ্টাখানেক মাছ ধরা-ধরি'র পরে চেঁচিয়ে উঠলো অনি!
:-মামী দ্যাখো,কত্তগুলো মাছ ধরে ফেলেছি আমি।
মামীসহ সবাই তাকালো তার খলুইটার ভিতরে।সত্যিই তো! বড় বড় কয়েকটা চ্যাঙমাছ আর বাকীসব চ্যাঙের বাচ্চাতে প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে খলুইটা!অবাক হয়ে ভাবছে সবাই,কী করে সম্ভব!মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়সের একটা পিচ্চি মেয়ে,যে কখনো মাছ ধরেইনি,সে কী করে এত্তগুলো মাছ ধরতে পারলো?তা-ও কি-না পিচ্ছিল প্রকৃতির চ্যাঙমাছ!কৌতুহলি সবার মধ্যে থেকে পাশের বাড়ীর মায়া'মাসী বলে উঠলো,
:-অনি তুই এত অল্প সময়ে এতগুলো মাছ ধরলি কীভাবে!যা আমরা বড়রা তোর আগে এসেও ধরতে পারি নি।অত্যন্ত গর্বভরে অনি বলল,
:-কেন?মাছ ধরা তো খুবই সহজ ব্যাপার। কাদার উপর মাথা বের করে রেখেছিল চ্যাঙ আর চ্যাঙের বাচ্চগুলো,আমি খপাখপ করে ধরে ধরে,খলুইতে রেখেছি ব্যস।মায়া'মাসী বলল,
:-দাঁড়া,মাটিতে ঢেলে দেখি,কী কী মাছ ধরেছিস?
সমস্ত মাছ মাটিতে ঢালার পরে, অপার বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখলো সবাই!গোটাকয়েক ছোট ছোট চ্যাঙমাছ ছাড়া-বাকীসব'ই চ্যাঙ নয়,ব্যাঙ নয়,দেড়-দুই ইঞ্চি সাইজের ব্যাঙের বাচ্চা-ব্যাঙাচি!

                ---- প্রীতিপ্রভা রায়-চয়নিকা
                      দশম শ্রেণী(বিজ্ঞান বিভাগ)
                      কিশোরী গঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়।
                      থানা কিশোরী গঞ্জ।
                      জেলা নীলফামারী।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

নিদ্রিতার প্রতি - মুশফিক বরাত

নিদ্রিতাঃ জিরো জিরো সিক্স আবারো - মুশফিক বরাত

ছেলেটির নাম আগুন - মুশফিক বরাত