প্রলেতারিয়েতকে লেখা মুশফিক বরাতের চিঠি- ২

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে আমি ভর্তি হলাম সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে যেটি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানায় অবস্থিত। আমাদের সময় অবশ্য সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কেউ প্রিন্সিপালের দায়িত্বে ছিলেন না। আমি কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবার অনেক দিন পরে অবশ্য শুনতে পাই যে, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা ধারাবাহিকভাবে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। আমি অবশ্য পড়াশুনোয় কখনোই অমনোযোগী ছিলাম না। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন সবাই ‘অতিরিক্ত মেধাবী’। ‘অতিরিক্ত মেধাবী’ বললাম এ কারণেই যে- তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন বাংলাদেশের সবচে’ বড় আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট (অর্থাৎ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বিষয়ে সবার মধ্যে ফার্স্ট), আবার কেউ ছিলেন বাংলাদেশের একটি পুরো বিভাগ অর্থাৎ রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক- আবার কেউ ছিলেন ছাত্রাবস্থায় গোল্ড মেডেলিস্ট। সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক কলেজে পড়ার সময় পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে যেমন চলতো আমার ‘কবিতা চর্চা’; তেমনি চলছিল বাংলাদেশের মার্কসবাদী লেখকদের বইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি। বাংলাদেশের মার্কসবাদী লেখক যেমন হায়দার আকবর খান রনোর বই পড়তে আমি বেশ আগ্রহী ছিলাম সেসময়। পরবর্তীতে পরিপূর্ণ লেখক হবার পরে আমার উপলব্ধি হয় যে, একজন মানুষ বড় কিছু হতে চাইলে প্রথমেই হয়ে ওঠে একজন কবি। আমিও কবিতা লিখতাম- পরে কলেজের পাঠ চুকিয়ে যাবার পরে রংপুরে গিয়ে হলাম সাহিত্য সমালোচক; তারও পরে ঔপন্যাসিক অবশেষে রাজনীতিবিদ-প্রাবন্ধিক। আমি রংপুরে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ’-এর সদস্য হই। সে সময়ে অর্থাৎ ২০০৪ সালে রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক আলীম স্যার। সাহিত্য সমালোচক হিশেবে রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন দৈনিক যুগের আলোর সাপ্তাহিক সাহিত্য পাতায় আমার বেশ কয়েকটি লেখা ছাপা হয়েছিল। সেসময়ে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় লেখা ছাপা হওয়াটা ছিল খুবই গৌরবের। কেননা ঐ সাহিত্য পাতাটিতে কারমাইকেল কলেজের বাঘা বাঘা অধ্যাপক আর রংপুর বিভাগের সমস্ত সাহিত্য লেখকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেই লেখা ছাপা হতো। আমার লেখাগুলো সংগ্রহ করার দায়িত্ব পড়েছিল শাহ আলম স্যারের। এইচ. এস. সি. পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং করার সময় এমনি করেই দিনগুলো কাটছিল আমার। বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং-এ রংপুরে থাকার সময় আমার রুমমেট ছিল স্কুল বন্ধু শামীম। সে অবশ্য বর্তমানে এম.বি.বি.এস ডাক্তার। আমাদের ঠিক পাশের মেসেই থাকতো বন্ধু তারেক (সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের বন্ধু)। তারেক তো বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বুদ্ধিজীবী। তারেক আমাদের সাথে কোচিং শেষ করে পরবর্তীতে গিয়ে ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। আইন বিভাগের সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ও একই সাথে সমস্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট। তারেক যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রত্যেক বছর ফার্স্ট হচ্ছিল তখন আমার সাথে মোবাইলে আলাপ হয়েছিল। তারেক বললো, “আমার (ল-Law) আইনশাস্ত্রের উপর পড়াশুনোর মেধা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের মাথা পাগল হয়ে গেছে। স্যারদের মন্তব্য- এমন মেধাবী ছাত্র আমরা ইতিপূর্বে দেখিনি।” আমার আরেক বন্ধু আউয়াল (উচ্চতা প্রতিবন্ধী) সেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছে।অনেকেই হয়তো জানেন না,আমার জন্মদিন ২৬ এপ্রিল,১৯৮৬।

ইদানীং রংপুরের রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন এর সাধারণ সম্পাদক। রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ-এর ‘রংপুর বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলন’-এ গত ১০ ডিসেম্বর (২০১৬) আমি স্বপরিবারে উপস্থিত ছিলাম। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে দিনব্যাপী এর আয়োজন ছিল। এ সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সম্মানিত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, ছড়াকার, নাট্যকার, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সংগঠক ও সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবী এসেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাবিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ (কলকাতা)-এর প্রথম শাখা হিশেবে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি সুদীর্ঘকাল গবেষণা, প্রকাশনা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে অবিভক্ত বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠিত করে নতুন উদ্যমে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাবার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে কোচিং করার জন্য ভর্তি হলাম পার্বতীপুরের তমাল কোচিং সেন্টারে। তমাল কোচিং-এ টানা তিন বছর কোচিং করার পর অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিও পেলাম। তমাল কোচিং-এ প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে পরীক্ষা দিতে হতো। এবং এতে পাঁচ টাকা মূল্যের পুরষ্কারও জুটতো। তমাল কোচিং-এ আমরা পার্বতীপুরের সব মেধাবী ছাত্ররা পড়তাম। এবং যে কয়জন পড়তাম তাদের সবাই একসাথে বৃত্তি পেয়েছিলাম- একজনও বাদ থাকেনি। সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিকে পড়ার সময়ও পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমার কবিতা চর্চা চলতো। মাঝখানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানও শিখেছিলাম। অবশ্য গিটার বাজানো এখনো পর্যন্ত শেখা হয়ে উঠেনি। সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিকে পড়ার সময় শেষের দিকে অর্থাৎ এইচ.এস.সি. ২য় বর্ষের প্রসপেক্টাসে দুটো লেখা জমা দিয়েছিলাম। একটি কবিতা; অন্যটি ছোটগল্প। আমার প্রিয় কবি অবশ্য তখন শামসুর রাহমান। (...................................................................)।
এই চিঠিতে দেয়া একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যগুলো আমি সাধারণত সবাইকে জানাই না- কাউকে কাউকে জানাই। তাই বলে এ তথ্যগুলো কাউকে জানানো যাবে না তা নয়- সবাইকে জানানো যাবে।

Comments

Popular posts from this blog

নিদ্রিতার প্রতি - মুশফিক বরাত

নিদ্রিতাঃ জিরো জিরো সিক্স আবারো - মুশফিক বরাত

ছেলেটির নাম আগুন - মুশফিক বরাত