নিদ্রিতার জন‍্য ভালোবাসা --- মুশফিক বরাত

১.

নিদ্রিতা পথ চলছে একাকী জনহীন রাস্তায়
হাঁটছে আপন মনে, কোমল শরীর দুলিয়ে
এগিয়ে কিছুটা টিউলিপের গন্ধ প্রত‍্যাশায়
শিরশীর্ষ উঁচু- পথ এলোমেলো
এদিক-সেদিক ছড়িয়ে রয়েছে বালুকণা।
একটা ফুলের বাগান, নির্জন নিঃসঙ্গতায় পূর্ণ
গন্ধ চেয়ে নিয়েছে সহসাই এক সাহসী যুবক।
চতুর কুকুরের দল পিছু নিয়েছে যেন
পথ আগলে ধরেছে বখাটেরা।

উষ্ণ পুরুষটির দীর্ঘ গ্রীবায় হাত রাখোনি যদিও
বুকের পাঁজরে ভুলোনি সাহসী যুবকটির বেদনাও
বলোনি- হেঁটেছি, নিঃসঙ্গ হেঁটেছি সঙ্গীহীন
এগিয়ে এসেছে শহুরে লাল শিয়ালের জুটি
এগিয়ে এসেছে জনৈক প্রৌঢ় বৃদ্ধ।
সাহসী মন নিয়ে কেঁপে উঠেছ কখনো
নিভৃত লোকালয়ে উদয় খুঁজেছ কখনো।

উদিত হয়েছে সূর্য
উদিত হয়েছে চন্দ্র
জানান দিয়ে গেছে কেঁপে কেঁপে ধ্রুবতারা।
গন্ধ শুঁকেছো রজনীগন্ধার
পরশ নিয়েছো রক্তজবার
ভেসেছ সুখস্বপ্নে সুখরামের-
এসেছে আরেকটি সুবর্ণ দিন।

নিঃসঙ্গতায় কাটছে কি আজকাল?
বেদনায় নীল হয়েছ কি দিনময়?
জেনেছ কি!
আমিও ঘুমাইনা আজকাল দুঃস্বপ্নের ঘোরে
চেয়ে থাকিনা দীর্ঘ প্রতীক্ষায়-
ভাবি নষ্ট আবেগে নিদ্রিতার কোমলতায়।
এমনি কোনো এক সকালে
ডেকে উঠব আচমকা- আমি তোমার সঙ্গী হব।

২.
যখন দেখি মোনালিসা পেইন্টিংয়ের চেয়ে একজন
পান্ডার সামর্থ‍্য বেশি
যখন ভগবান তার স্বর্গীয় লেজ গুটিয়ে পালায়।
যখন দেখি আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির
কোনো ভেদ নেই( রবি ঠাকুরের মতো )
তখন আকাশ ফেটে পড়ে নিনাদে
ঘন ঘন বিদ‍্যুৎ চমকায়
আর সাম্রাজ্যবাদ দেয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডাক;
উদাস কবির কবিতা ছাপাবার স্বপ্ন আর নগ্ন নারীর
হাজারো পোজ অনবরত বাতাস কাঁপায়।

বেগতিক কৃষক ইরি আবাদের কৃতিত্বের
লজ্জা বয়ে নিয়ে বেড়ায়
ঈশ্বর তার প্রকাণ্ড রক্তাষ্মু জিহ্বা বের করে।
উড়িয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর
ভেঙে যায় বিদ‍্যুতের খুঁটি- ভাসমান সোনালী ধানক্ষেত;
আচমকা ডাক দিয়ে যায় অজানা নূহের প্লাবন।

একদিন হঠাৎ নিদ্রিতাকে বলে উঠলাম,
বড়ই দুরন্ত কিশোর ছিলেন স্টিফেন হকিং।
আমি কথা দিয়েছিলাম হাসবো না।
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস‍্যা পেরিয়ে গেছে( সুনীলের মতো )
নিদ্রিতার দেখা নেই, কথা নেই।
আমিও আর বহুদিন হাসিনি।

নাটোরের বনলতা সেনের কাছাকাছি
দুটো সিগারেট ধরালাম।তারপর শীতল বালুকায়
ছুঁড়ে দিয়ে মাড়িয়ে দিলাম।
এবং আবারো রেড ক্রসিং।

৩.
রূপোলী আলোকে সোনালী ঝলকে
পৃথিবী পানে ধেয়ে আসবে ডাবল হেলিক্স নেবুলা;
সংযত হবে না কেটু পাহাড়ের দম্ভ
আর ভেঙে যাবে না চাটুকার নেতার লালায়িত স্বর্গ।

কোনো এক রূপোলী বিকেলে গান ছেড়ে
উচ্চাঙ্গ সংগীতের চর্চায় মশগুল হলেম সকলে-
আমি বলেছিলাম- আমার দৌড় ঐ নচিকেতা পর্যন্তই।
নিদ্রিতা বলেছিল- আমি শুধু শ্রেয়া ঘোষাল।
সবাই হেসেছিল; সজোরে সবাই হেসেছিল।
সভায় কথা উঠেছিল, একজন সাধুপুরুষ ক্ষমতায় বসলে
তারও সমালোচনা ক'রে ছেড়ে দেবে কি জনতা?
আমি মাওলানা ভাসানীর মতো বললাম, হয়তো তাই।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধবে ব'লে।

নিদ্রিতা সাড়ে ছত্রিশের বুড়ো দেখেছো যে
তার হলুদ কোমর দুলিয়ে চলে আর বউ খোঁজে।
এমন মুহুর্তে আমি ভাবছিলাম চব্বিশের কথা
তোমার বয়স হয়েছিল তাও আমার জানা।
লোকে বলে, আঠারো বছর বয়স স্পর্ধায় নেয়
মাথা তোলবার ঝুঁকি আর বয়ে নিয়ে
আসে সফলতা।যেমন বিশ ডেকে আনে বিফলতা।

বাড়ে তেলের দাম, বাড়ে ডিজেলের মূল‍্য
জনতার সহিত ক্ষমতাসীন নেতার দূরত্বের খবর
একটা পান্ডাও রাখেনা।
যেমন মোদীর মার্বেল পাথরের মূর্তি
জনতা দড়ি লাগিয়ে টেনে নামাতে চায়।
ভণ্ড-চরিত্রহীন নেতার দম্ভ দিকে দিকে
ফাল্গুনের আহ্বান যখন অনেক অনেক দূরে-
শাদা ঘোড়ায় চেপে নন্দক তলোয়ার হাতে
দেবদত্ত ছুটিয়ে আসছেন তিনি- ক‍্যাসিনো রাজ
দিকে দিকে সমাজতন্ত্রের আহ্বানে।

Comments

Popular posts from this blog

নিদ্রিতার প্রতি - মুশফিক বরাত

নিদ্রিতাঃ জিরো জিরো সিক্স আবারো - মুশফিক বরাত

ছেলেটির নাম আগুন - মুশফিক বরাত